সাইনোসাইটিস নিরাময়ে হোমিও চিকিৎসা –ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সাইনাসের সমস্যা হলে দেহে জ্বর এবং দুর্বল একটা ভাব অনুভূত হয়। তবে একটু সচেতন হলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাইনাসের আসলে কোন কাজ নেই। কেন যে এটা মানুষের শরীরে অবস্থান করে? গবেষকরা অনেক মাথা ঘামিয়েও এর কোনা সমাধানে আসতে পারেন নাই। তবে এটা হলো আমাদের নাকের চার দিকে কিছু বায়ু প্রকোষ্ঠ থাকে যেগুলোর মধ্যে একটা ঝিল্লি থাকে, যেই ঝিল্লি নাকের সংগে সংযুক্ত। তাই নাকের কোন সমস্যা হলে এটাকে অনেক ক্ষেএে সাইনাস বলা হয়। আজকের লেখা এখান থেকে শুরু…

সাইনুসাইটিস কি?
নাকের চারপাশে হাঁড়ের বাতাসপূর্ণ কুঠুরি থাকে, যেগুলোকে সাইনাস বলা হয়। সাইনুসাইটিস হলো সাইনোসের ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ।

সাইনাসের প্রদাহের কারণঃ
সাইনাসের প্রদাহের মধ্যে ম্যাগজিলারি সাইনাসের প্রদাহ সবচেয়ে বেশী হয়। একিউট সাইনুসাইটিস ও শ্বাসনালির ওপরের অংশের প্রদাহ, এলার্জি, অপুষ্ঠি, স্যাঁত সেতে পরিবেশে থাকলে, দীর্ঘদিনের দাঁতের রোগ থেকেও প্রদাহ হতে পারে। আবার শ্বাসনালির ছিদ্র সরু হলেও এরকম হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সাইনাসের প্রদাহ নাকের প্রদাহ থেকে হয়ে থাকে।

সাইনোসাইটিসের লক্ষণঃ
নাকের পাশে অনবরত ব্যথা, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা হতে পারে। সব সময় নাক বন্ধ থাকা, কোন স্বাদ ও ঘ্রাণ বুঝতে না পারা, সাধারণত: বিমর্ষতা, অস্থিরতা ও অনীহা জাগা, মাঝে মধ্যে জ্বর আসা। মিউকোসার আবরণ পাতলা হয়ে যাওয়া।

নাকের পলিপঃ
নাকের পলিপ থেকেও সাইনুসাইটিস রোগ হতে পারে। নাকের পলিপের উৎপত্তি মূলত: নাকের সাইনাসগুলো থেকেই। আর এ পলিপ আসলে সাইনাসের কিংবা নাকের আবরণের একটি অংশ, যা দেখতে অনেকটা আঙ্গুর ফলের থোকার মতো।

পলিপ রোগের উপসর্গ কি কি হতে পারেঃ
* নাক বন্ধ পলিপ রোগীদের প্রধান ও একমাত্র উপসর্গ বলা যেতে পারে।
* ঠান্ডাজনিত কারণে নাক বন্ধ প্রকট হয়।
* হাঁচি অন্যতম উপসর্গ।
* নাক থেকে পুঁজ বা পানি নির্গত হওয়া।
* মাথা ব্যথা।
* নাক ব্যথা বা মুখমন্ডলে ব্যথা অনুভব করা।
* নাকের পিছনে ময়লা অনুভব করা, যা নাক টানলে কালো কালো পদার্থ বের হয়।
* ঘুষ ঘুষে কাশি, বার বার গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা।
* নাক থেকে দূর্গন্ধ বের হওয়া।
* হা করে বা মুখ খুলে ঘুমানো বা শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া, নাকডাকা ইত্যাদি।

সাইনুসাইটিস হতে কিভাবে মুক্ত থাকা যায়?
* এলার্জি এবং ঠান্ডা এড়িয়ে চলা।
* আলো বাতাসপূর্ণ বাড়ির পরিবেশে বসবাস করা।
* ঘন বসতি পরিহার করা।
* পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ।
* নাকের প্রদাহ বা অন্য কোন নাকের রোগ বা গলার অন্য কোন সমস্যা, দাঁতের প্রদাহ ইত্যাদির সময়োপযোগী চিকিৎসা করলে অনেক ক্ষেত্রে সাইনোসাইটিস হতে মুক্ত থাকা সম্ভব হতে পারে।

হোমিও প্রতিবিধানঃ
রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, এজন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকে রোগীর পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলেই হোমিওপ্যাথিতে সাইনাসের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। যেহেতু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা লক্ষণ ভিত্তিক, সেহেতু লক্ষণের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা বাঞ্চনীয়। লক্ষণের উপর নাক্স ভূমিকা, টিউবার কুলার, লেমনা মাইনর, ক্যালকেরিয়া কার্ব, সোরিনাম, থুজা সহ আরো অনেক মেডিসিন আসতে পারে, তবে পলিপাসের জন্য অনেক সময় নাক বন্ধ থাকে। এলিয়াম সেফা-৩০, টিউক্রিয়াম-২০০, সোরিনাম-২০০, ১ম স্যাঙ্গুইনেরিয়াম-২০০ নিয়মিত সেবন করলে সেড়ে যায়। যাদের নাকে পলিপাস হেতু মাঝে মাঝে ময়লা মিশ্রিত রক্ত হাতে লাগে তাদের প্রথমে ১ ডোজ ফেরাম ফস ৩দ্ধ এবং তারপরের দিন থেকে ১ ডোজ টিউক্রিয়াম-২০০ সন্ধ্যায় সেবনে ভাল ফল পাওয়া যায়।

ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

print

Share This:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য নিউজ সমূহের শিরোনাম