মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাট –ড. মো: আশরাফুজ্জামান মন্ডল

মুক্তিযুদ্ধের পটভুমি ও লালমনিরহাট:
পশ্চিম পাকিস্তানীদের দুঃশাসন আর প্রতারণায় বিপর্যস্থ পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা তাদের সঙ্কটাপন্ন অস্তিত্বকে ক্রমশঃ অনুধাবন করেন। আত্মপরিচয়কে সমুন্নত রেখে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে তাদের মাঝে পুনর্জাগরিত হতে থাকে সংগ্রামী চেতনা। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীও লিপ্ত থাকে নানারূপ প্রহসন ও ষড়যন্ত্রে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ই ডিসেম্বর প্রাদেশীক পরিষদের নির্বচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট এলাকা থেকে রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ এবং কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম এলাকা থেকে আজিজুর রহমান নির্বাচিত হন। আর প্রাদেশীক পরিষদের নির্বাচনে লালমনিরহাট থেকে আবুল হোসেন, কালীগঞ্জ থেকে করিম উদ্দিন আহমেদ এবং হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম থেকে আবিদ আলী নির্বাচিত হন। ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে শুরু হয় পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর টালবাহনা(১)।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালি জাতি পাকিস্তানী দুঃশাসনেরর শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীন হতে ঐক্যবদ্ধ হন। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, মজুর সহ বাংলার আপামর জনতা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ স্বাধীনতাকামী অনেকেই পশ্চিমা বিরোধী প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনকে সংগঠিত করতে থাকেন। আজকের লালমনিরহাট জেলার ভৌগোলিক সীমানা থেকে সংগঠকের মহান দায়িত্ব পালন করেছিলেন- লালমনিরহাট থানার আবুল হোসেন, কমরেড সামসুল হক, সামসুল হুদা মন্টু বক্সী, কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আব্দুল কুদ্দুছ, কাজী মোসলেম, আদিতমারী থানা (বর্তমান) এর কমরেড সিরাজুল ইসলাম, কালীগঞ্জ থানার করিম উদ্দিন আহমেদ, হাতীবান্ধা থানার নজরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান, আজিজুর রহমান এবং পাটগ্রাম থানার আবিদ আলী, কাজী নুরুজ্জামান, মনির উদ্দিন আহাম্মদ প্রমুখ(২)।

থানা ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা:
(১) লালমনিরহাট থানা : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণের খবর টেলিফোনের মাধ্যমে রাতারাতি লালমনিরহাটে পৌঁছলে লালমনিরহাট শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পশ্চিমা শোষক ও তাদের দোসরদের চিরতরে উৎখাত করার দৃঢ় সংকল্পে চারদিকে ¯েøাগান উচ্চারিত হতে থাকে। অবাঙালি তথা উর্দূভাষী বিহারী অধ্যুষিত লালমনিরহাট শহরে বিরাজ করতে থাকে টান-টান উত্তেজনা(৩)।
৮ই মার্চ সকাল ১০ টায় বর্তমান লালমনিরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রঙ্গনে মোঃ শহিদুল্লাহকে আহবায়ক করে গঠিত হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ইলিয়াস হোসেন, আজিজুল্লাহ সরকার, ফিরোজদীন, ইসহাক শিকদার, শফিকুল ইসলাম মন্টু, শরিফ উদ্দিন (বাচ্চু), ভিকু, আবদুল কাদের, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, কামরুল হাসান আজাদ, গোলাম মাহবুব রুমি, পিল্টু, মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, মাহফুজার রহমান খোকন, এস.এম. সুলতান বাবলু, জুলহাস, আব্দুল করিম, জিন্নাহ, অবাঙালী জহির খান প্রমূখের অংশ গ্রহণে ঐদিন ছাত্র-যুবকদের একটি বিরাট মিছিল লালমনিরহাট শহর প্রদক্ষিণ করে(৪)। একই তারিখে রাত ৮ টার দিকে মোঃ সামছুল আলম (নাদু) বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লালমনিরহাটে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা তৈরী করেন(৫)। ৯ই মার্চ সকাল ৯.৩০ মিনিটে নাজিম উদ্দিন আহমেদ লালমনিরহাট থানার পাশে প্রকাশ্য পাকিস্তানি পতাকায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেন। সকাল ১০ টায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যগণ সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। পরে অবাঙালি তথা উর্দূভাষী বিহারীরা দল বেঁধে এসে পতাকাটি নামিয়ে শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে দেয়(৬)।
১০ই মার্চ থেকে লালমনিরহাটে শুরু হয় খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল, পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুুতি গ্রহণ এবং অস্ত্র সংগ্রহ অভিযান। সংক্ষিপ্ত গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন আজিজুল হক(৭)।
১৫ই মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে গড়ে তোলা হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট থানা শাখা। প্রথম অবস্থায় এ পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আবদুল কুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, কাজী মোসলেম উদ্দিন, ছাত্রনেতা মোঃ শহীদুল্লাহ প্রমূখ। স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের কন্ট্রোলরুম স্থাপিত হয় গোশালা রোড সংলগ্ন বর্তমান পাটোয়ারী ভবনে। কেন্দ্রীয় পরিষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তৎকালীন এম.পি.এ আবুল হোসেনের ব্যবহৃত টেলিফোন সেটটি (নং-১০) এখানে স্থানান্তরিত হয়(৮)।
২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিকেল ৩ টায় খোর্দ্দসাপটানার তৎকালীন জিন্নাহ মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এ জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৎকালীন এম.পি.এ আবুল হোসেন, কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আবদুল কুদ্দুছ প্রমূখ। এ জনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে জিন্নাহ মাঠের নাম পরিবর্তন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাঠ নামকরণ করা হয়(৯)।
২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনার পর লালমনিরহাটে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রংপুর থেকে পাকবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করতে কয়েকজন আনসার তিস্তা ব্রীজের পূর্ব পাড়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধান প্রধান সড়ক, রেলপথ এবং বিমান ঘাঁটি এলাকায় বেরিকেড সৃষ্টি করা হয়। পরদিন ২৭শে মার্চ সকাল থেকে ছাত্র ও যুবকদের চারটি দলে বিভক্ত করে বর্তমান লালমনিরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঐদিন দুপুর ২টার দিকে থানাপাড়ার শাহজাহান মিছিল নিয়ে তৎকালীন আপইয়ার্ড কলোনী অতিক্রম করার সময় বিহারীদের সাথে গোলযোগ বেঁধে যায় এবং এক পর্যায়ে কলোনীতে গোলাগুলি শুরু হয়। এসময় বিহারী জিয়ারত খানের ভগ্নিপতি ই.পি.আর জিয়াউল হক- এর একটি টু-টু বোর রাইফেলের গুলি তার বুকের ডান পাশের পাঁজরে আঘাত হানে। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে তিনি শহীদ হন। লালমনিরহাটে অবাঙালিদের হাতে প্রথম শহীদ তিনি। তার শহীদ হওয়ার খবর দ্রæত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে উঠে। ২৮শে মার্চ সকালে লালমনিরহাট জেলায় একাত্তুরের প্রথম শহীদ শাহজাহানের মরদেহ তার বাড়ীর পাশে দাফন করা হয়। শহীদ শাহজাহানের স্মৃতিকে অ¤øান করে রাখার জন্য পরবর্তীতে আপইয়ার্ড কলোনীর নাম পরিবর্তন করে শহীদ শাহজাহান কলোনী রাখা হয়(১০)।
শহর ব্যাপী চলতে থাকে বাঙালি ও অবাঙালিদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও প্রতিশোধ-প্রতিরোধের পালা। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে শহর ছাড়তে শুরু করেন, আবার অনেকে বাংলার স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসেন। ১লা এপ্রিল থেকে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট শহরকে পাকবাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তিস্তা ব্রীজের পূর্ব পাড়ে গড়ে তোলা হয় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যুহ। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকবাহিনী কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধায় আক্রমণ চালানোর প্রস্তুুতি গ্রহণ করেছে মর্মে সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ ২রা এপ্রিল সকাল থেকেই তিস্তা ব্রীজের পূর্বে পাড়ে সতর্ক অবস্থানে থাকেন। বিকেল ৩ টায় পাকবাহিনী তিস্তা ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নিয়ে হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজ আহাদ তিস্তা ব্রীজ অতিক্রম করার চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়। একপর্যায়ে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধগণ তিস্তা ব্রীজের পূর্ব পাড়ে অবস্থান নিয়ে থাকেন যাতে কোনভাবে পাক বাহিনী প্রবেশ করতে না পারে(১১)।
পরদিন ৩রা এপ্রিল। সকাল ১০ টার দিকে খবর পাওয়া যায় যে, কয়েকজন অবাঙালি ইপিআর ফুলবাড়ী থেকে লালমনিরহাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সাথে একজন বন্দি বাঙালি ইপিআরও রয়েছেন। তারা বিহারীদের সাথে মিলিত হতে পারলে বাঙালি ইপিআরকে হত্যা করবে। এখবর শুনে ছাত্র-যুবক সহ অনেকেই ছুটে আসেন তাদের প্রতিহত করার জন্য। বর্তমান ইউএনও অফিস (তৎকালীন সার্কেল অফিস)- এর সামনে তারা অবাঙালি ইপিআরদের বাধা দেন। কিন্তু তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় গুলি করার ভয় দেখিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এমন সয়ম পিছন থেকে তাদেরকে ধাওয়াকারী কয়েকজন বাঙালি ইপিআর এসে পৌঁছলে বর্তমান নেছারিয়া মাদ্রাসার স্থলে তৎকালে বিদ্যমান সমজিদ এবং পাকা কুয়ার আড়ালে গিয়ে তারা পজেশন নেয়। তাদেরকে ধাওয়াকারী বাঙালি ইপিআর সদস্যগণও বর্তমান ডাঃ সাইফুল হকের বাসার স্থলের দোলা জমিতে শুয়ে পজেশন নেন। শুরু হয় প্রচন্ড গোলাগুলি। বাঙালি ইপিআর (১০ উইং -এর নায়েক) লুৎফর রহমান ক্রুলিং কলে আরও সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমান ইউএনও অফিসের সামনের মোড়ের কোণায় নিচু স্থানে পজেশন গ্রহণ করেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে দুপুর ১২ টার দিকে একটি গুলি তার মাথায় আঘাত হানে এবং মাথার খুলি উড়ে যায়। তিনি লালমনিরহাটে প্রথম শহীদ বাঙালি ইপিআর। অবাঙালি ইপিআররা পরে পুটিমারীরর দোলা দিয়ে আপইয়ার্ড কলোনী হয়ে বর্তমান বি.ডি.আর ক্যাম্পের সামনে পজেশন গ্রহণ করে। তাদেরকে ধাওয়া করে বাঙালি ইপিআরগণ, ক্যাপ্টেন আজিজুল হক, ইলিয়াস হোসেন, শফিকুল ইসলাম মন্টু প্রমূখ সহ বিক্ষুব্ধ জনগণ তাদেরকে ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে তারা আত্মসমর্পণে সম্মত হওয়ার খবর বন্দি বাঙালি ইপিআর (১০উইং -এর সিপাহী) আজিজুল হকের মাধ্যমে প্রেরণ করে। আজিজুল হক আলাপ-আলোচনা শেষে ‘আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে হত্যা করা হবেনা’ এখবর জানানোর জন্য অগ্রসর হলে অবাঙালি ইপিআররা তাকে গুলি করে এবং তিনি শহীদ হন। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা অবাঙালি ইপিআরদের হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বর্তমান আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারের সামনে তাদেরকে হত্যা করেন। তাদের একজনের কবর বর্তমান লালমনিরহাট কালেক্টরেট স্কুলের সামনে(১২)।
৩রা এপ্রিল তারিখে পাকবাহিনী তিস্তা ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নিয়ে আবারও প্রচন্ড গোলাবর্ষণ শুরু করে, অবশেষে এপথে অগ্রসর হতে না পেয়ে তারা বিমান বাহিনীর সহায়তায় ৪ঠা এপ্রিল সকাল ১১ টায় ত্রিমোহণী নদী অতিক্রম করে এসে লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটিতে অবস্থান নেয়। ফলে কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধাগণ তিস্তা ব্রীজের পূর্ব পাড়ের ডিফেন্স ছেড়ে দিয়ে দ্রæত লালমনিরহাট ত্যাগ করে বিভিন্ন পথে কুড়িগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এদিন থেকে লালমনিরহাটে শুরু হয় পাকবাহিনী ও অবাঙালি তথা উর্দূভাষী বিহারী কর্তৃক নির্মম হত্যাকান্ড এবং বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ সহ ব্যাপক ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড। পাকবাহিনী বিমান ঘাটিতে অবস্থান নিয়ে প্রথমে হত্যা করে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকী গ্রামের করিম বকস মন্ডলের দ্বিতীয় পুত্র আবুল কাশেম মন্ডলকে। লালমনিরহাট কলেজের এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবুল কাশেম মন্ডলকে তারা বিমান ঘাঁটির পাকা রানওয়েতে আছাড় মেরে আহত করে, তারপর দু’পা দুুদিকে টেনে ছিড়ে ফেলে। তিনি লালমনিরহাটে পাকবাহিনীর হাতে প্রথম শহীদ(১৩)।
পাকবাহিনী বিমান ঘাঁটিতে প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে এবং লালমনিরহাট শহর, বড়বাড়ী, কুলাঘাট ও মোগলহাটে সাব-ক্যাম্প স্থাপন করে হত্যাকান্ড এবং বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ সহ ব্যাপক ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে।
৫ই এপ্রিল সকাল ১০ টার দিকে পাকবাহিনী ইলিয়াস হোসেনকে খুঁজতে জেলা শহরের গোশালা বাজার সংলগ্ন তার বাড়ীতে গিয়ে তাকে খুঁজে না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা একলাল মিয়াকে ধরে মরাতে মারতে বর্তমান লালমনিরহাট রেলওয়ে ওভার ব্রীজের পশ্চিম পাড়ের রিক্সা ষ্ট্যান্ডে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এদিন আরও অনেক লোককে এখানে হত্যা করা হয়। রেল কর্মচারী আবুল মনসুরকে বিকেলে এখানে এনে অপর এগারো জন সহ এক লাইনে দাড় করিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয় এবং অন্যান্যদের মত তাকেও মৃত ভেবে ডি.আর.এম অফিসের পাশের একটি গর্তে ফেলে দেয়া হয়, কিন্তু গুলি লাগার পরও তিনি সৌভাগ্যবশতঃ বেঁচে যান(১৪)। এ স্থানটি লালমনিরহাটের বৃহৎ বধ্যভূমি। রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বহুলোককে এখানে ধরে এনে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ ডি.আর.এম অফিসের পাশের একটি গর্তে ফেলা হয়। এ বধ্যভূমিতে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রেলওয়ে শহীদ স্মৃতি সৌধ থেকে যাদের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন- ডাঃ এ. রহমান, ডাঃ এ. মোক্তাদির, ডাঃ এম. রহমান, ডাঃ এ.জি. আহম্মেদ, আনিস উদ্দিন, খাঁন মোঃ করিম বকস, মকবুল হোসেন, ইয়ার হোসেন, বসির উদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন, মন্তেজার রহমান, রহিমুদ্দিন, ফজলুর রহমান, আবুল কাশেম, মমিয়া মহাম্মদ, এম. এ. রাজ্জাক, জসিম উদ্দিন, কে.ডি হোসেন, এস.এম.এস. রহমান, ওহেদুর রহমান, এম এইচ. আহম্মদ, কোবাত হোসেন, রাজকুমার দাস, ফরিদ উদ্দিন, বাচ্চা মিয়া, ইদ্রিস, খাঁন মোঃ ইয়াছিন আলী, ফজলুর রহমান, আশরাফ আলী, কাশেম, মনির, আলী আহম্মেদ, মনোয়ার, উমেশ চন্দ্র দাস, খোকা, আলী আকবর, মতিউর রহমান, বেলায়েত হোসেন, ওমর আলী, রহিম উদ্দিন, নওয়াব আলী, এনায়েত হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন, আজিম উদ্দিন, রোকন উদ্দিন, আব্দুস সোবহান, নুরুন মিয়া, ইয়াছিন আলী, সোবহান, ইয়াছিন নুরী, ইব্রাহীম, আয়েজ উদ্দিন, আব্দুল আলী, মেহের আলী, জালাল উদ্দিন, হামিদুর রহমান, ফোরাম আলী, আলী আশরাফ, মুলী মিঞা, আলী আকবর, আলতাফ হোসেন, জোবেদ আলী, দানিয়াল দাস, আহম্মদ হোসেন, আহসান উল্ল্যাহ, আব্দুল বারেক, এ.এইচ. মালেক এফ.কে চৌধুরী, নজরুল ইসলাম, রহিম, আব্দুল গফুর, রহিম উদ্দিন, চয়ন উদ্দিন, সুলতান আহম্মেদ, আবদুল্লাহ, নাজিম উদ্দিন আকন্দ, লিয়াকত উল্ল্যা, মোতাহার হোসেন, সামছুল আরফিন ভূঁইয়া, চাঁন্দ মিয়া, হাফিজ উদ্দিন, শরিফ উদ্দিন আহম্মেদ, আবদুল্লাহ, আহসান উল্ল্যা(১৫)।
জেলা শহরের বর্তমান সুইপার কলোনী সংলগ্ন পুুকুরপাড়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালি তথা বিহারীরা অনেক লোককে হত্যা করেছিল বলে জানা যায়। লালমনিরহাট চিলড্রেন পার্ক স্কুলের শিক্ষক মোস্তফা হাসান আহমেদকে বিহারী কয়েকজন যুবক বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে এখানে হত্যা করে(১৬)। তাছাড়া বর্তমান ফায়ার সার্ভিস রোডে ফিসারীর পিছনের অংশ ও প্রথম ব্রীজের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় রাস্তার পূর্ব পাশে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা রামজীবন গ্রামের আনছার আলী মন্ডল সহ আরও অনেক লোককে হত্যা করে(১৭)। পাকবাহিনী রাজপুরের আরাজী চিনাতুলী এবং মোগলহাটের ফুলগাছ এলাকায় হামলা চালিয়ে অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে(১৮)।
৮ই নভেম্বর রংপুর টাউন হল আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিছু মুক্তিযোদ্ধা সহ কারমাইকেল কলেজের প্রতিভাবান ছাত্রনেতা মুখতার ইলাহী সাহেবগঞ্জ থেকে এসে লালমনিরহাটের বড়বাড়ীর আইরখামার নামক গ্রামে রাত্রি যাপনের জন্য যাত্রা বিরতি করেন। সে সময় মুক্তিবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে তিস্তা ব্রীজকে রক্ষার জন্য পাকবাহিনী একটি শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খরব গোপনে পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছলে তারা ৯ই নভেম্বর ভোরে প্রায় চারশত সৈন্য সহ এসে বড়বাড়ী আক্রমণ করে। তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তারা বড়বাড়ীর চারপাশে নির্বিচারে হত্যাকান্ড শুরু করে। স্বল্প সময়ের মধ্যে শতাধিক লোক শহীদ হন। এসময় মুখতার ইলাহী পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। বড়বাড়ী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও পাঙ্গারাণী ল²ীপ্রিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, মুখতার ইলাহী সহ অনেককে ধরে এনে পাকবাহিনী তৎকালীন আইরখামার কাউন্সিল অফিস প্রাঙ্গনে (ডাকবাংলো মাঠে) তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আবুল কাশেম সহ অনেক শহীদের মৃতদেহ তাদের পরিবারবর্গ নিয়ে যান, অবশিষ্ট মৃতদেহ কাউন্সিল অফিস প্রাঙ্গনেই দাফন করা হয়। পাকবাহিনী কর্তৃক বড়বাড়ী ও আশপাশে সংঘটিত হত্যাকান্ডে যারা শহীদ হন তাদের মধ্যে বড়বাড়ী শহীদ স্মৃতি সৌধ থেকে যাদের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন- আবুল কাশেম মিঞা, মুখতার ইলাহী, জাহের সরদার, আব্দুর রহমান, মিয়া মামুদ, আব্দুল হান্নান, বাকির, ফরিদ উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, শাহজাহান আলী, আমদ্দি, ধন মামুদ, ফরাদ উদ্দিন, মজিবর রহমান, আব্দুল আজিজ, আব্দুল গণি, গিয়াস উদ্দিন, জব্বার, তহুর উদ্দিন, তৈয়ব আলী, খোকা কামার, ফরিদ, আপ্তার আলী, জমির উদ্দিন, উমর মামুদ, জহদ্দি, ভোলা মামুদ, জাবেদ আলী, উমর আলী, হেকমত আলী, আনছার আলী, দরবার মিয়া, ফেইস্স্যা মামুদ, আব্দুল হক, ময়েন উদ্দিন, বাহার উদ্দিন, আফতার আলী, দছি মামুদ, আজাহার আলী, বছির মামুদ, মোজাম্মেল হক, ছাত্তার আলী, মোজর আলী, ভোলা মিয়া (শাজাহান), মনচেটু, মনদ্দি, শামসুল হক, নাড়িয়া মামুদ, কেচুয়া মামুদ, হামিদ মিয়া, মফিজ উদ্দিন, তহির উদ্দিন, খলিল, শরিফ উদ্দিন, জগেশ্বর শীল, নরহরি শীল, আব্দুর রউফ, মফিজ উদ্দিন, সমছেল মামুদ, তজর উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, মজিবর, ফারাজ উদ্দিন, আকতার মামুদ, কেশা মামুদ, সামছুল হক, বনমালী, পানা উল্যা, উমর আলী, আব্দুস সাত্তার, আলী মিয়া, শফি উদ্দিন, আলী আহমেদ, জমির উদ্দিন, তেরপু মামুদ(১৯)।
এছাড়াও কুলাঘাট ও মোগলহাট সহ লালমনিরহাট থানার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে অভিযান চালিয়ে পাকবাহিনী বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ সহ অনেক লোককে হত্যা করে।

(২) আদিতমারী থানা (বর্তমান) : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল পাকবাহিনী আদিতমারী এলাকায় প্রবেশ করে অতর্কিতে বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ সহ ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ৪ঠা এপ্রিলের পর থেকে তারা অনেক নিরীহ বাঙালিকে ধরে এনে আদিতমারী রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব দিকে লালপুলের পাশে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিতো। আদিতমারী এলাকায় এটিই বৃহৎ বধ্যভ‚মি(২০)। এছাড়াও সারপুকুর ইউনিয়ন ও দুর্গাপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে পাকবাহিনী ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।

(৩) কালীগঞ্জ থানা : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মার্চ লালমনিরহাটে বিহারীদের হাতে শাহজাহান শহীদ হওয়ার ঘটনা প্রতিবাদী যুবক তমিজ উদ্দিনের হৃদয়কে ভীষণভাবে ব্যথিত করে। পরের দিনই তিনি কাকিনার কয়েকজন যুবককে নিয়ে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। এ সংগ্রাম পরিষদ তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে কালীগঞ্জ থানার সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে নেন। অন্যদিকে সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের কালীগঞ্জ শাখা গঠন করে তৎকালীন এম.পি.এ. করিম উদ্দিন আহমেদ ছাত্র-যুবক-জনতাকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করতে থাকেন(২১)।
৬ই এপ্রিল পাকবাহিনী রেলযোগে কালীগঞ্জে প্রবেশ করে বর্তমান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গন, করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, ভোটমারী ভাখারীর পুল, শ্রীখাতা পাকার পুল সহ বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে দিনের পর দিন বিক্ষিপ্তভাবে বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ সহ হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে(২২)।
পাকবাহিনী বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ লোকজন ধরে এনে মদাতী ইউনিয়নের মুশরত মদাতী গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হকের বাড়ীর সামনের বাঁশের ঝাড় বেষ্টিত পুকুর পাড়ে জবাই করে পুকুরে ফেলে দিতো। পুকুরটি মৃত দেহের স্তুপে পরিণত হয়েছিল। এটি কালীগঞ্জের বৃহৎ বধ্যভ‚মি হিসেবে পরিচিত(২৩)।

(৪) হাতীবান্ধা থানা : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩রা মার্চ তৎকালীন হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের এম.পি.এ. আবিদ আলীর নেতৃত্বে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা ডাকবাংলো মাঠে জনসভা হয়। ৯ই মার্চ ডাকবাংলো মাঠের উত্তর পার্শ্বে সেনেটারী অফিসের সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন পূর্বক জব্বার আলী মিয়াকে আহŸায়ক করে সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের হাতীবান্ধা শাখা গঠন করা হয়(২৪)।
৮ই এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে পাকবাহিনী হাতীবান্ধায় প্রবেশ করে। প্রাণ বাঁচাতে লোকজন ভারতের দিকে ছুটতে থাকেন। পাকবাহিনী হাতীবান্ধায় প্রবেশ করে প্রথমে গুলি চালায় শিংগীমারীর দিকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। পাকবাহিনী বড়খাতা, ভবানীপুর, সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, শিংগীমারী, পারুলিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে তারা ক্যাম্প স্থাপন পূর্বক ব্যাপক অগ্নি সংযোগ ও হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে হাতীবান্ধায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। পূর্ব সিন্দুর্না নুন খাওয়ার কুড়া, দক্ষিণ সিন্দুর্না কাচারীঘর প্রাঙ্গন, পারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, বড়খাতা প্রধান সড়ক সংলগ্ন এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে তারা নিরীহ লোকজনদের ধরে এনে হত্যা করে(২৫)।

(৫) পাটগ্রাম থানা : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩রা মার্চ থেকে তৎকালীন হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের এম.পি.এ. আবিদ আলীর নেতৃত্বে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পাটগ্রামে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ১২ ও ১৩ই মার্চ পাটগ্রামের সংগ্রামী নারী সমাজও মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ১৫ই মার্চ আবিদ আলীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের পাটগ্রাম শাখা। পাকবাহিনী হাতীবান্ধা থেকে পাটগ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করলে প্রবল প্রতিরোধের মুখে তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পাটগ্রামের অধিকাংশ এলাকা মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময় পর্যন্ত পাকবাহিনী মুক্ত থাকে। এখানকার বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ৬ নং সেক্টর হেড কোয়ার্টার। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় দলের সদস্যরা এখানে পরিদর্শনে আসেন। ১০ই অক্টোবর পরিদর্শনে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে রাত্রি যাপন করে ১১ই অক্টোবর সকাল ১০টায় পাটগ্রাম থানা হলরূমে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্যদের বিপ্লবী সঙ্গীত শ্রবণ করে ভ‚য়সী প্রশংসা করেন(২৬)।

পাকবাহিনী মুক্ত লালমনিরহাট:
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী হাতীবান্ধার বড়খাতা আক্রমণ করে। ২৮ ও ২৯শে নভেম্বর রাতে পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর প্রবল আক্রমণ চালালে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়। ফলে ৩০শে নভেম্বর হাতীবান্ধা পাকবাহিনী মুক্ত হয়। ৪ঠা ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ কমাÐ গঠিত হয়, যা মিত্র বাহিনী নামে পরিচতি পায়। ৪ ও ৫ই ডিসেম্বর কালীগঞ্জ এবং আদিতমারীতে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করলে পাকবাহিনী দ্রæত পিছু হটে লালমনিরহাটে এসে জমায়েত হতে থাকে। ৬ই ডিসেম্বর দিবাগত ভোরে তারা তিস্তা ব্রীজ হয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে চলে যায়। ফলে ৬ই ডিসেম্বর আজকের লালমনিরহাট জেলা পাকবাহিনী মুক্ত হয়(২৭)।

তথ্য সুত্র:
(১) বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) আজিজুল হক বীরপ্রতীক, লালমনিরহাট এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(২) প্রাগুক্ত।
(৩) বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম মন্টু, লালমনিরহাট এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(৪) প্রাগুক্ত।
(৫) মোঃ সামছুল আলম (নাদু), লালমনিরহাট এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(৬) বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাট এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(৭) প্রাগুক্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) আজিজুল হক বীরপ্রতীক।
(৮) প্রাগুক্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম মন্টু।
(৯) প্রাগুক্ত।
(১০) প্রাগুক্ত।
(১১) প্রাগুক্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) আজিজুল হক বীরপ্রতীক।
(১২) প্রাগুক্ত।
(১৩) একাত্তুরের প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ সামছুল আলম (নুরুন্নবী), মহেন্দ্রনগর, লালমনিরহাট এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(১৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস হোসেন, লালমনিরহাট এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(১৫) রেলওয়ে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ, লালমনিরহাট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(১৬) শহীদ মোস্তফা হাসান আহমেদ, লালমনিরহাট এর পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(১৭) প্রাগুক্ত, একাত্তুরের প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ সামছুল আলম (নুরুন্নবী)।
(১৮) প্রাগুক্ত, শহীদ মোস্তফা হাসান আহমেদ।
(১৯) বড়বাড়ী শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ, লালমনিরহাট এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(২০) মোঃ আশরাফুজ্জামান মন্ডল (সবুজ), লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস, (লালমনিরহাট: লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর, অক্টোবর ২০০৭), পৃষ্ঠা ২২৩।
(২১) প্রাগুক্ত।
(২২) বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, মুশরত মদাতী, কালীগঞ্জ এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(২৩) প্রাগুক্ত।
(২৪) এম.পি.এ. আবিদ আলী, পাটগ্রাম এর পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
(২৫) প্রাগুক্ত, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা।
(২৬) প্রাগুক্ত, মোঃ আশরাফুজ্জামান মন্ডল (সবুজ), পৃষ্ঠা ২২৬।
(২৭) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২২৭।

print

Share This:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য নিউজ সমূহের শিরোনাম