গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সফল প্রস্তুতির কৌশল

শাহাদত হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় || উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি শেষ করেই প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে না এমন ছেলে–মেয়ে খুজে পাওয়া কঠিন। প্রত্যেকের পরিবারও এমন স্বপ্ন দেখে, আমার ছেলে-আমার মেয়ে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক, পরিবারের ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুক।

ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে আরও একটা শব্দ—যুদ্ধ! ঢাল-তলোয়ারের ঝনঝনানি নেই ঠিক। কিন্তু সারাদেশের লাখো শিক্ষার্থীকে যে কঠিন প্রতিযোগিতা, তাতে যুদ্ধ শব্দটা বোধ হয় বাড়াবাড়ি নয়। একজন যোদ্ধা যেমন শুধু ভালো অস্ত্রের দ্বারা যুদ্ধে সফল হয়না ঠিক সেভাবেই শুধু পড়ালেখার প্রস্তুতি দিয়েই ভালো কিছু করা যাবে এ ধারনাও যুক্তিযুক্ত নয়।

এই ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হতে মূলত প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা এবং প্রস্তুতি। তোমরা যারা  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে তাদের জন্যে আমার আজকের এ লেখা।

বই, গাইড, কনসেপ্ট বুক, স্পেশাল নোট, বিগত বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে আছে প্রশ্নব্যাংক আরো কত কী! সব কি পড়ব? সময় তো নেই। তাহলে কোনটা পড়ব?” এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় প্রায়। আমরা বলি, বইয়ের বিকল্প কিছুই নেই। কোচিং সেন্টারগুলো যত যা কিছুই দিবে তোমাকে, সব কিছুর উপরে বই। কারণ ভর্তি পরীক্ষার ৯৯% প্রশ্ন নিঃসন্দেহে তোমার পাঠ্যবই থেকেই হবে। পাঠ্যবইয়ের সম্পূর্ণটা যে ভালমত বুঝে পড়বে, সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে স্থান পাবেই।

সবার আগে তোমাকে গুরুত্ব দিবে হতে সময়ের প্রতি। এখন থেকে ২/৩ মাস যাই থাকুক, সেখানে ১ মাসের টার্গেট নিয়ে পড়া শুরু কর। প্রস্তুতি যেমনি হয় হোক, তোমার মতো করে তুমি এগোতে থাকো। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে এই ১ মাসের প্রত্যেক সেকেন্ডের মূল্য অনেক। এই  ১ মাসে পড়েও প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। এখন আর আগের মতো ফেসবুকে সময় দেওয়া যাবে না, ফেসবুক বা বিনোদনমূলক মিডিয়াগুলো যথাসম্ভব বন্ধ রাখতে হবে। এগুলো পড়াশোনার মনোযোগকে নষ্ট করে। উপরন্তু সময় নষ্ট করে।

এখন আসি কাজের কথায়, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসরণ করে প্রশ্নপত্র তৈরি করে থাকে। এজন্য পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পূর্বে কোন ধরনের প্রশ্ন এসেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কঠিন প্রশ্ন করে থাকে। কঠিন প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। প্রশ্ন তোমার কাছে কঠিন মানে সবার কাছেই কঠিন। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, টপিক গুলো বেশি বেশি করে পড়তে হবে।

কারণ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় গুরুত্বপূর্ণ টপিক এবং অধ্যায় থেকেই বেশি প্রশ্ন আসে। আর লিখিত অংশের জন্য মূল বইয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। প্রতিদিন টার্গেট করে পড়তে হবে। সিলেবাস শেষ করার জন্য যতক্ষণ দরকার ততক্ষণ পড়তে হবে।

আমার পরামর্শ প্রতিদিন মন দিয়ে ৮-১০ ঘণ্টা পড়ার টার্গেট রাখতে হবে। আমার রুটিনটা ছিল শুধু রাতের জন্যে, অর্থাৎ রাত ৮ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত রুটিন মানতাম। আর দিনের বেলায় কোচিং ছিল, কোচিং শেষে নিজের মতো করে পড়তাম। আবার অনেকের ভুল ধারনা যে, কোচিং না করলে  চান্স পাওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে আসল পরীক্ষার প্রশ্ন কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলো করবে না, করবেন অভিজ্ঞ শিক্ষকরা। আর তাঁরা কিন্তু প্রশ্ন করার সময় গাইড/স্পেশাল বুক হাতে নিবেন না। তাঁরা তোমাদের পাঠ্য বই থেকেই সিলেবাস অনু্যায়ী প্রশ্ন তৈরি করবেন।

মানবিক বিভাগে  পরীক্ষার জন্যে  সাধারণত ৩ টি বিষয়  পড়তে হবে৷  বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। বাংলার জন্য এইচএসসির মূল বইয়ের পাশাপাশি ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই অবশ্যই পাঠ করতে হয়। ইংরেজির জন্য ভালো প্রকাশনীর গ্রামার বই ও মুখস্থ পার্টের গাইড বই অবশ্যই লাগবে। আর সাধারন জ্ঞানের জন্য নতুন বিশ্ব, আজকের বিশ্ব বা এ বিষয়ে বাজারে ভালো মানের যেকোনো বই এবং নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে।

বাজারে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির অনেক বই পাওয়া যায়। গতানুগতিক বইয়ের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে একবার হলেও “এডমিশন হ্যাকস” বইটা দেখতে পারো। এক বইয়ে পেয়ে যাবে সকল সাবজেক্ট ভিত্তিক সুন্দর, সহজ আলোচনা।

স্বল্প সময়ে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য সর্বপ্রথম, সর্বোচ্চ বিক্রিত ও রকমারি বেস্টসেলার “এডমিশন হ্যাকস” বই৷ ভর্তি পরীক্ষায় খুবই কম সময় পাওয়া যায় কিন্তু স্বল্প সময়ে অনেক বড় সিলেবাস শেষ করা খুবই কষ্টকর৷ অনেকে বুঝতে পারোনা কোন টপিক গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলো দরকার নেই৷ যার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পায় না। সঠিক বই, সঠিক দিকনির্দেশনা, সঠিক প্রস্তুতি না থাকলে লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব নয়৷ তাই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বাদ দিয়ে প্রয়োজন যতটুকু, ঠিক ততটুকুর আয়োজন নিয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা স্টুডেন্টরা “এডমিশন হ্যাকস” বইটি রচনা করা হয়েছে। একটি বইয়ে বাংলা, ইংরেজি, তথ্য প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান, প্রশ্ন ব্যাংক সবকিছু পেয়ে যাবে৷ যাদের প্রস্তুতি শূন্য তারা আজই বইটি সংগ্রহ করো এবং প্রস্তুতি শুরু করে দাও।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের মডেল টেস্ট কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে বাসায় ঘড়ি ধরে নিজে নিজে পরীক্ষা দিতে হবে।

 

শাহাদত হোসেন
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও 
পরিচালক, শাহাদত’স রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন্স

print

Share This:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য নিউজ সমূহের শিরোনাম