
লাল দর্পণ।। আজ ১ লা ফেব্রুয়ারি, লালমনিরহাট জেলা বাস্তবায়নের ৪০ বছর পূর্তি এবং ৪১ বছরে পদার্পণের দিন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে লালমনিরহাট মহকুমা ‘‘জেলা’’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
জানা যায়, ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেঃ জেঃ জিয়াউর রহমান ঝটিকা সফরের এক পর্যায়ে লালমনিরহাটে আসেন। এ সময় লালমনিরহাটবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে এক জনসভায় তিনি লালমনিরহাটকে মহকুমায় উন্নীত করার আশ্বাস প্রদান করেন। ফলস্বরূপ ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রংপুর জেলার ৪ টি মহকুমা ভেঙ্গে ৫ টি করা হয়। এসময় কুড়িগ্রাম মহকুমার লালমনিরহাট থানা এবং রংপুর সদর মহকুমার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা নিয়ে লালমনিরহাট মহকুমা গঠিত হয়। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারি ৭১তম লালমনিরহাট মহকুমার উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) ম, মজিদ-উল হক।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অবলম্বনে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু তালিকা প্রস্তুতের সময় লালমনিরহাট মহকুমার নাম বাদ পড়লে লালমনিরহাটকে জেলায় উন্নীত করণের দাবীতে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগষ্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এইচ. এম. এরশাদ সমীপে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। ফলস্বরূপ ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি লালমনিরহাটের সোহরাওয়ার্দী ময়দানে এক জনসভায় তিনি লালমনিরহাট প্রশাসনিক জেলার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। ২৫ জানুয়ারি তারিখে লালমনিরহাট জেলা ঘোষণার বিষয় গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় এবং একই খ্রিস্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মহিলা ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী ডঃ সাফিয়া খাতুন কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে লালমনিরহাট মহকুমা ‘‘জেলা’’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। লালমনিরহাট জেলা উদ্বোধনের সময় এর অধীনে সংসদীয় আসন সংখ্যা ছিল ৩ টি, উপজেলার সংখ্যা ৫টি, ইউনিয়নের সংখ্যা ৪১টি এবং পৌরসভার সংখ্যা ১টি। বর্তমানে সংসদীয় আসন সংখ্যা ৩ টি, উপজেলার সংখ্যা ৫টি, ইউনিয়ন সংখ্যা হয়েছে ৪৫টি এবং পৌরসভার সংখ্যা ২টি।
লালমনিরহাট জেলা বাস্তবায়নের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হয় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। এরপর লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর কর্তৃক প্রথম ‘‘লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস’’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর।
আবারও লালমনিরহাট জেলা জাদুঘরের উদ্যোগে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি জেলা বাস্তবায়নের ৩০ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়। লালমনিরহাট মহকুমা ও জেলা বাস্তবায়নে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ ও ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে মোট ৩০জনকে লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর সম্মাননা প্রদান করা হয়।
লালমনিরহাট জেলা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোঃ আশরাফুজ্জামান মন্ডল জানান, সময়ের ব্যবধানে এ জেলার প্রশাসনিক ও ঐতিহ্যগত অনেক পরিবর্তন এসেছে। একারণে তার লেখা ‘‘লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস’’ গ্রন্থটি আর পুনর্মুদ্রণ না করে তিনি ‘‘লালমনিরহাট জেলার প্রশাসনিক ইতিহাস’’ গ্রন্থ প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছেন। ভবিষতের জন্য বর্তমানকে ধরে রাখা একজন ইতিহাস গবেষকের দায়িত্ব। লালমনিরহাট জেলার প্রথম ইতিহাস গ্রন্থের লেখক হিসেবে তিনি তার সময় পর্যন্ত এ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতিগুলো গ্রন্থাবদ্ধ করে রেখে যেতে চান।